Home / Education / বিদেশে পড়াশোনা

বিদেশে পড়াশোনা

Find your varsity

বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তা সংকট আর চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তা

  • ২০২৪ সালে বড় আন্দোলনের পর সরকার পরিবর্তন হলেও ২০২৫ সালেও দেশে স্থিতিশীলতা আসেনি।
  • শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বেকারত্বের হার বাড়ছে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বেকারত্ব ৩০% ছাড়িয়েছে।
  • নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, দুর্নীতি আর সীমিত সুযোগ অনেককেই বিদেশে যাওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এ কারণেই আজকের তরুণদের মধ্যে প্রায় সবাই ভাবে—“দেশে ভবিষ্যৎ নেই, আধুনিক দেশে গেলে জীবন বদলাবে।”


কেন বিদেশে পড়াশোনা?

বিদেশে পড়াশোনা মানে শুধু ডিগ্রি নয়। এর সাথে যুক্ত হয়—

  1. গুণগত শিক্ষা: ইউরোপ, কানাডা বা যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি আছে।
  2. চাকরির সম্ভাবনা: পড়াশোনার পাশাপাশি বৈধভাবে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
  3. স্কলারশিপ: অনেক দেশে টিউশন ফি কম বা ফ্রি।
  4. স্থায়ী হওয়া: পড়াশোনা শেষে কাজ পেলে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ তৈরি হয়।
  5. নিরাপদ জীবন: সামাজিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও সুস্থ জীবনযাত্রা।

প্রথম বিশ্বের ভবিষ্যৎ: ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, কানাডা

  • ইউরোপ: জার্মানি, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস—এসব দেশে পড়াশোনা মানে বিশ্বমানের শিক্ষা, স্কলারশিপ আর গবেষণার সুযোগ।
  • যুক্তরাজ্য: অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখানে আসে মাস্টার্স বা ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য। চাকরি পাওয়ার সুযোগও বেশি।
  • কানাডা: নিরাপদ, অভিবাসন-বান্ধব এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের অসংখ্য সুযোগ।

১২ পাশের পর কীভাবে শুরু করবে?

ধাপ–১: রিসার্চ ও পরিকল্পনা

  • কোন দেশে পড়তে চাও ঠিক করো।
  • সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, প্রোগ্রাম, টিউশন ফি, স্কলারশিপ ও ভিসা রুলস পড়ো।

ধাপ–২: ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষা প্রস্তুতি

  • IELTS/TOEFL: কমপক্ষে IELTS 6.0–6.5 লাগবে।
  • ফিনল্যান্ড বা ডেনমার্কে গেলে স্থানীয় ভাষার বেসিক শিখলে চাকরি ও যোগাযোগে সুবিধা হবে।

ধাপ–৩: দরকারি স্কিল শেখা

  • কম্পিউটার স্কিল
  • যোগাযোগ দক্ষতা: ইন্টারভিউ দেওয়ার মতো আত্মবিশ্বাস।
  • টাইম ম্যানেজমেন্ট: পড়াশোনা ও কাজ একসাথে সামলানোর জন্য।

ধাপ–৪: আবেদন প্রক্রিয়া

  • HSC ট্রান্সক্রিপ্ট, রেফারেন্স লেটার, মোটিভেশন লেটার তৈরি করো।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ডেডলাইন চেক করো।
  • অ্যাপ্লিকেশন ফি (প্রায় ৫০–১০০ ইউরো) দিতে প্রস্তুত থাকো।

ধাপ–৫: ভিসা প্রক্রিয়া

  • টিউশন ফি বা স্কলারশিপ লেটার
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (১০,০০০ ইউরোর মতো ফান্ড দেখাতে হয়)
  • বাসস্থানের কাগজপত্র
  • মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স


ডেনমার্কে পড়াশোনা: সময়সীমা, স্কলারশিপ ও আবেদন

আবেদন সময়সীমা (Deadlines)

  • সাধারণ মিডলিস্ট (Autumn/Sommer Intake)
    প্রায় সব ইউনিভার্সিটিতে৮ সেপ্টেম্বর শুরু করে, আবেদন জমা দিতে হয় ১৫ জানুয়ারি
  • Master’s জন্য Aarhus University
    আবেদন শুরুর তারিখ ৮ নভেম্বর , শেষ করার ১৫ জানুয়ারি
  • University of Copenhagen
    ভর্তি (Sept): non-EU শিক্ষার্থীদের জন্য শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি, রিপ্লাই পাওয়া যায় ১ মে–এ, ভর্তি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে হয় ৫ মে–এর মধ্যে।
    ফেব্রুয়ারি শুরুর Intake: আবেদন শেষ ১ সেপ্টেম্বর, রিপ্লাই ১ ডিসেম্বর, স্বীকৃতি দিতে হয় ৫ ডিসেম্বর–এর মধ্যে (ku.dk)।

স্কলারশিপ ও ফান্ডিং

  • বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্কলারশিপ: University of Copenhagen বা অন্যান্য ড্যানিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এনরোলমেন্টের সময় ফি-ছাড় বা ফান্ডিং পাওয়া যায় (Study in Denmark, Scholars Avenue)।
  • সরকারি বা ইউরোপিয়ান স্কলারশিপ: Erasmus Mundus, NRDplus ইত্যাদি—যদি তোমার ইউনিভার্সিটি কোন আন্তর্জাতিক বা ডুয়াল-ডিগ্রি প্রোগ্রামের সাথে অংশ থাকে, তাহলে আবেদন করতে পারো (Study in Denmark)।
  • সময়মতো আবেদন করো—স্কলারশিপের ডেডলাইন অনেকটা আগে, তাই ১৫ জানুয়ারি–এর আগে সমস্ত ফর্ম ও প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে (Holafly)।

ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা: সময়সীমা, ফি ও স্কলারশিপ

আবেদন ও ধাপসমূহ

  • Application rounds (Master’s)
  • End of January: English-taught programmes-এর প্রথম রাউন্ড শেষ।
  • Mid-March: Finnish/Swedish programmes-এর জন্য দ্বিতীয় রাউন্ড শেষ।
  • Mid-July: স্টাডি প্লেস গ্রহণের শেষ সময়।
  • July–August: Supplementary round, ভর্তি শুরু সেপ্টেম্বর (Mastersportal)।
  • Application windows for Autumn 2026 (government scholarship)
    অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৫ অক্টোবর–২০২৬ ফেব্রুয়ারির মাঝে খুলবে (Vacancy Bridge)।

ফি ও স্কলারশিপ

  • টিউশন ফি: non-EU শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ৬,০০০–১৮,০০০ ইউরো (Wikipedia, Uniranks)।
  • স্কলারশিপ (University of Helsinki):
  • ৫০% বা ১০০% টিউশন ফি কভার করে
  • দুই বছর ধরে, সঙ্গে নির্দিষ্ট কন্ডিশন থাকে (55 ECTS/year) (University of Helsinki)।
  • সরকারি স্কলারশিপ: মূলত কোনো এক centralized ফান্ড না—প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্কলারশিপ দেয়, এবং আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যখন তুমি ভর্তি আবেদন করো (Study in Finland, Vacancy Bridge)।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • University of Oulu: প্রথম বছরে টিউশন ফি ১০ জুলাই ২০২৫–এর মধ্যে একবারেই দিতে হবে (Oulun yliopisto)।

সারসংক্ষেপে – একটি স্পষ্ট তালিকা

দেশআবেদন সময়সীমাস্কলারশিপ সুবিধা
ডেনমার্ক১৫ জানুয়ারি মোটামুটি সর্বত্র (Autumn); ফেব্রুয়ারি–১ সেপ্টেম্বরইউনি বা Erasmus প্রোগ্রামভিত্তিক
ফিনল্যান্ডJanuari–March আবেদন রাউন্ড; acceptance mid-Julyটিউশন ছাড়, ৫০%–১০০% স্কলারশিপ (বিদ্যাপীঠ অনুযায়ী)

তোমার জন্য পরবর্তী ধাপ:

  1. ঠিক করো কোন Intake (Autumn বা Spring) বা কোন দেশ।
  2. জয়েন করতে চাও University of Copenhagen, Aarhus, Helsinki, Aalto—তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রোগ্রাম অনুসারে ডেডলাইন চেক করো।
  3. সব প্রস্তুতি (টু-ইএল/IELTS, CV, motivation letter) ৩–৪ মাস আগে শুরু করো।
  4. ভর্তি + স্কলারশিপ আবেদন একসাথে করো।
  5. সব কাগজ সম্বল (bank statements, recommendation letters) প্রস্তুত রেখে, ভিসার জন্য অপেক্ষা করো।

এখন তুমি পুরোটা জানো—সময়সূচি, স্কলারশিপ, আবেদন, ফি সব কিছু। একদম পরিষ্কার প্ল্যান অনুযায়ী এগিয়ে যাও। দরকার হলে পরবর্তীতে ডাফিন ফি বা ইউনিভার্সিটি-specific তথ্য চাওয়া, আমি হয়ে আছি পাশে।

বিদেশে গিয়ে জীবন

শুধু ভর্তি হলেই শেষ নয়। বিদেশে গিয়ে নতুন দেশে মানিয়ে নিতে হয়।

  • প্রথমে কালচারাল শক আসবে।
  • পার্ট-টাইম কাজ খুঁজতে হবে।
  • পড়াশোনার চাপ সামলাতে হবে।
  • নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে (বাংলাদেশি কমিউনিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস গ্রুপ)।

শেষ কথা

বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির পরিবেশে বিদেশে পড়াশোনা অনেকের কাছে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বিশেষ করে ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড—তরুণদের জন্য নিরাপদ ও সম্ভাবনাময় গন্তব্য।

কিন্তু শুধু ইচ্ছে করলেই হবে না। তোমাকে সঠিক পরিকল্পনা, ভাষা দক্ষতা, স্কিল আর সময়মতো আবেদন করতে হবে।
বিদেশে পড়াশোনা শুধু স্বপ্ন নয়—এটা তোমার ভবিষ্যৎ গড়ার সঠিক সুযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *